বৃহস্পতিবার ● ২৮ নভেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » ময়মনসিংহ » ঈশ্বরগঞ্জে মানসিক রোগী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষিকা দিয়ে চলছে পাঠদান
ঈশ্বরগঞ্জে মানসিক রোগী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষিকা দিয়ে চলছে পাঠদান
উবায়দুল্লাহ রুমি, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে মানসিক রোগী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষিকা দিয়ে চলছে দরিবৃ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। একজন প্রতিবন্ধী ও একজন মানসিক রোগি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আতংকে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের দরিবৃ গ্রামে ১৯৭৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ২শ ৩০জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। বিদ্যালয়টিতে ৬জন শিক্ষক থাকলেও এর মাঝে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও একজন মানসিক ভারসম্যহীন শিক্ষিকা রয়েছে। আর এখানেই যত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষিকা পারভীন আক্তারকে তার স্বামী হাবিবুর রহমান পাঠদানে সহযোগিতা করে কোনরকম চালিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু পাঠদানে বেশি সমস্যা সৃষ্টি করছে মানসিক ভারসম্যহীন শিক্ষিকা শরীফা বেগম। শরীফা বেগম ২০১৮ সালের ৩ মার্চ বিদ্যালয়টিতে যোগদান করেন। যোগদানের পর তিনি মেধাবী শিক্ষক হিসেবেও প্রশংসা কুড়িয়ে ছিলেন। ২০২২ সালে তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। ২০২৩ সালে মানসিক সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করলে ওই বছরের ১১নভেম্বর চিকিৎসার জন্য থাকে ৬মাসের ছুটি দেওয়া হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর চলতি বছরের ২৪ মে তিনি আবারও বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। কিন্তু তিনি বিদ্যালয়ে এসে উদ্ভট আচরণ শুরু করেন। তার উদ্ভট আচরণে শিক্ষার্থীরা চরম ভয় পায়। অন্য শিক্ষকগণ শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। শুধু এই বিদ্যালয়েই নয় তিনি আশপাশের বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে গিয়েও সমস্যার সৃষ্টি করেন।
নাসরিন আক্তার, আল নাঈম ইসতেখার আবিদ, শরিফা খাতুন, রুবি আক্তার সহ একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, শরিফা ম্যাডাম ক্লাসে আমাদের সাথে পাগলের মত আচরণ করেন। প্রায় সময় ম্যাডাম নিজেই নিজের কান ধরে উঠবস করেন। উনার আচরণে আমরা ভয়ে আতংকে থাকি। কখন কি করেন উনি নিজেই তা জানেন না। আমরা চাই একজন ভালো শিক্ষক আমাদের ক্লাস নিবেন।
অভিভাবক নূরুল আমীন, রাখিয়া সুলতানা ও নার্গিস আক্তার বলেন, শরিফা ম্যাডামের আচরণে ছেলে মেয়েরা অনেক সময় ভয়ে স্কুলে আসতে চায় না। তাকে দেখে বাচ্চারা ভয় পায়। প্রায় সময়ই আশপাশের বাড়িতে ঢুকে পড়ে উল্টাপাল্টা কাণ্ড করে বসেন। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। শরিফা ম্যাডাম সরিয়ে নিলে অন্য শিক্ষকগণ অন্তত বাধাগ্রস্তহীন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারতেন। উনার জন্য বাচ্চারাও শিক্ষা গ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একজন মানসিক রোগি কিভাবে শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করে তা তাদের বোধগম্য নয়।
প্রধান শিক্ষক রোকেয়া বেগম বলেন, শিক্ষিকা শরীফা বেগমকে নিয়ে সমস্যায় আছি। শরীফা মানসিক ভাবে চরম বিপর্যস্ত। তিনি ঠিক পাঠদান করাতে পারেন না। উল্টো বাচ্চাদের ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার নীলুফার হাকিম বলেন, শিক্ষিকার বিষয়টি প্রধান শিক্ষক হোয়াটসআপে জানিয়ে ছিলেন। ওই শিক্ষকের মানসিক সমস্যা রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন তবে পুরোপুরি সুস্থ্য হননি। পাঠদানের সমস্যার বিষয়টি লিখিত ভাবে জানালে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তার বলেন, শিক্ষিকার কারণে বিদ্যালয়ের পাঠদানে সমস্যার বিষয়টি লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমি চাই প্রতিটি বিদ্যালয়ে বাধাগ্রস্থহীন পাঠদান অব্যাহত থাকুক।