রবিবার ● ১২ জানুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রাষ্ট্রীয়ভাবে মাস্টারদাসহ সকল বিপ্লবীদের মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতির দাবি
রাষ্ট্রীয়ভাবে মাস্টারদাসহ সকল বিপ্লবীদের মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতির দাবি
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেনের ৯১তম ফাঁসি দিবসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
আজ রবিবার ১২ জানুয়ারি ২০২৫ সকাল ১০টায় রাউজান উপজেলায় মাস্টারদা সূর্যসেন স্মৃতি ভবনে সূর্যসেনের অবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা বলেছেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মহানায়ক ও ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা মাস্টারদা সূর্যসেনসহ অসংখ্য বিপ্লবীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে পেরেছে। ৩০ দশকে তারা বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন বলে ’৪৭-এ ভারতবর্ষ হতে ব্রিটিশরা উৎখাত হতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি বলেন, অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এদেশের তরুণ প্রজন্ম ইতিহাসের সে মহান বিপ্লবীদের ভুলতে বসেছে। আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ এই বিপ্লবীদের স্মরণ করে না। রাষ্ট্রীয়ভাবেও সূর্যসেনের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য কোন জাদুঘর নেই এবং দিবসটি এদেশে যথাযথ মার্যাদায় পালিত হয় না। ফলে ইতিহাস থেকে ক্রমান্বয়ে এই বিপ্লবীদের কথা হারিয়ে যেতে বসেছে।
তিনি, এই মহান বিপ্লবীদের মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি স্বরূপ সূর্যসেনের ফাঁসি দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মার্যাদায় পালন করার দাবি জানান।
অমল ত্রিপুরা আরো বলেন, বিপ্লবীদের অবমূল্যায়ন নয়, তাদের অবদান ও মহান ত্যাগকে আমাদেরকে স্বীকৃতি দিতে হবে। বিপ্লবী সূর্যসেন, তারকেশ্বর দস্তেদার, কল্পনা দত্ত, প্রীতিলতাসহ অসংখ্য বিপ্লবীদের সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করতে হবে এবং স্মরণ করতে হবে। বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ আমাদের জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে সাহস ও শক্তি যোগায়, অনুপ্রাণিত করে।
কর্মী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে অমল ত্রিপুরা বলেন, বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগ যুগ ধরে সেনাশাসন জারি রেখে সেখানকার পাহাড়ি জনগণের উপর শাসন-শোষণ, নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সেনা সেনাবাহিনী অপারেশন চলমান রয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর এই বন্দীদশা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে আমরা লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছি। আমাদের ওপর অর্পিত জাতির এই গুরু দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে। অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য এবং পাহাড়ি জনগণের মুক্তির সনদ পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি আদায়ের জন্য বিপ্লবীদের মত আমাদের নেতা-কর্মীদেরও বহু আত্মত্যাগ, কষ্ট, শ্রম দিয়ে নিজেকে সংগঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
তিনি পাহাড়ি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে এগিয়ে আসতে পাহাড়-সমতলে ছাত্র-যুব-নারীসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
নারী নেত্রী রিতা চাকমা বলেন, ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ শাসন অবসানের জন্য মাস্টারদা সূর্যসেনের বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে কল্পনা দত্ত, প্রতিলতাসহ অনেক নারী বিপ্লবে যুক্ত হয়েছিলেন। তাদেরকে ব্রিটিশদের হাতে আটক হয়ে কারাবরণসহ নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল। এই মহান বিপ্লবী নারীদের ত্যাগ পরবর্তীতে নারী সমাজকে লড়াই সংগ্রামে এগিয়ে আসার সাহস সঞ্চার করেছিল।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীরা এখনো শাসকগোষ্ঠী দ্বারা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। সমাজের তাদেরকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। এসব থেকে বেরিয়ে আসতে হলে নারী সমাজকে জেগে উঠতে হবে। নিজেদের অধিকারের জন্য লড়তে হবে, আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হবে।
সূর্যসেনের অবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন পিসিপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ভুবন চাকমা, কাউখালী উপজেলা শাখার সভাপতি জিপল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা ও কাউখালী উপজেলা শাখার সভাপতি রত্না চাকমা। এসময় সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন রাউজান সরকারি কলেজের শিক্ষক মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন। এছাড়াও পিসিপি, এইচডব্লিউএফ’র অন্যান্য নেতা-কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পিসিপির কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রোনাল চাকমা।
পুষ্পস্তবক অর্পণের আগে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতা-কর্মীরা অরক্ষিত অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকা সূর্যসেনের অবক্ষ মূর্তিতে ধোয়ামোছা করেন এবং স্থানটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন।