

সোমবার ● ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » সাজেক এ ৯৫টির বেশী রেস্তোরাঁ আগুনে পুড়ে গেছে : পর্যটকদের সাজেক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত
সাজেক এ ৯৫টির বেশী রেস্তোরাঁ আগুনে পুড়ে গেছে : পর্যটকদের সাজেক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্র সাজেকে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে ৯০টির অধিক রিসোর্ট ও কটেজ এবং দোকান। সোমবার ২৪ ফেব্রুয়ারী দুপুর ১টার দিকে অবকাশ রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানা যায়।
মুহুর্তেই আগুন আশপাশের রিসোর্টে ছড়িয়ে পড়ে। বেলা ৩টা পর্যন্ত ৯০-৯৫টির বেশি রিসোর্ট-কটেজে আগুনে পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য। এখনো পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর জানা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার দুপুরে প্রথমে সাজেক অবকাশ রিসোর্টে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে মুহূর্তে আগুন চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে এরই মধ্যে সাজেক অবকাশ রিসোর্ট, ইকো ভ্যালি রিসোর্ট, মেঘছুট রিসোর্ট, মনটানা রেস্টুরেন্ট, মারুয়াতি রেস্টুরেন্টসহ ১৫টি রিসোর্ট ও কটেজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। স্থানীয়দের সাথে নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রাণপন লড়ে যায় সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোন, ২৭ ও ৫৪ বিজিবির জোয়ানরা।
রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বেলা একটার দিকে রুইলুই ভ্যালির হেডম্যান লালথাংয়া লুসাইয়ের বাসভবনের পাশে সাজেক ইকো ভ্যালি রিসোর্টে প্রথমে আগুন লাগে। পরে তা আশপাশের বসতঘর ও রিসোর্ট-কটেজে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কয়েক শ পর্যটক আতঙ্কিত হয়ে রিসোর্ট-কটেজ থেকে বেরিয়ে যান। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছায়নি। দুর্গম রাস্তার কারণে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো পৌঁছাতে সময় লাগেছে এবং পানির সংকট থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে।
সাজেকের হিলভিউ রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী ইন্দ্রজিৎ চাকমা জানান, আগুন নেভাতে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় লোকজন চেষ্টা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ৩০-৩৫টির বেশী রিসোর্ট-কটেজ পুড়ে গেছে। দীঘিনালা থেকে ফায়ার সার্ভিস সাজেকে পৌঁছাতে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা লেগে যায়। এখানে যদি একটি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট থাকতে এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আকতার জানান, দুপুরের দিকে সাজেকের একটি রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। তাৎক্ষনিক ভাবে সেনাবাহিনী ও স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালায়। সাজেকে ফায়ার সার্ভিসের কোনো ইউনিট না থাকায় খবর পাওয়ার সাথে সাথে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চালায়। তবে কি ভাবে আগুণের সুত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তা পরে জানা যাবে বলে জানান তিনি।
এদিকে বিকেলে পর্যটন কেন্দ্র সাজেক ভ্যালীতে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা ও বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন।
এদিকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন মিডিয়া সেল থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান,
২৪ ফেব্রুয়ারি-২০২৫ ইংরেজি আনুমানিক দুপুর সোয়া ১টার দিকে সাজেক পর্যটন এলাকায় শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে সাজেক অবকাশ ম্যানুয়েল রিসোর্ট সহ পার্শ্ববর্তী রিসোর্টে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে মর্মে ধারণা করা হয়। আগুন মুহুর্তেই আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনা অবহিত হবার সাথে সাথে দ্রুত আগুন নির্বাপনের জন্য রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার ফায়ার সার্ভিসসহ স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর রিজিয়ন কমান্ডার, রাঙামাটি, রিজিয়ন কমান্ডার, খাগড়াছড়ি, জোন কমান্ডার, বাগাইহাট এবং খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এর সাথে যোগাযোগক্রমে করে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিকাল ৩টা ৪৫মি. পর্যন্ত আগুনে প্রায় একপাশ পুড়ে যায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৯০-৯৫ টির বেশি রিসোর্ট, ঘরবাড়ি, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি আগুনে পুড়ে গেছে মর্মে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয়দের নিকট হতে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
দীঘিনালা উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে,খাগড়াছড়ির ফায়ারসার্ভিস ইউনিটও এর সাথে যোগ দেয়। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন এর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ এর মাধ্যমে পর্যটক গমনের উপর সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে । নিকটবর্তী দীঘিনালা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে প্রেরণ করা হয়েছে। বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছেন।
সাজেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এয়ারফোর্সের ০২ টি হেলিকপ্টার move করার প্রস্তত কর হলেও আগুন নিয়ন্ত্রনে আসা এবং সন্ধ্যা নেমে আসায় তা স্থগিত করা হয়েছে মর্মে সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় সেনাবাহিনী, সাজেক থানা পুলিশ,সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ, স্থানীয় জনসাধার আগুন নিভাতে কাজ করছেন।
এছাড়া ২৪ ফেব্রুয়ারি-২০২৫ ইংরেজি তারিখ রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জে. এম শাখার স্মারক নং-০৫. ৪২. ৮৪০০. ৪০২. ০৩. ০০১. ২৫- ২১১ মুলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পাঠান মো. সাইদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সাজেক ভ্রমণের বিষয়ে পর্যটকদের নিরুৎসাহিতকরণ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক পর্যটন এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ড সংগঠিত হওয়ায় পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে আগামী ২৫ফেব্রুয়ারি-২০২৫ ইংরেজি তারিখ হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হয়।