সোমবার ● ৬ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » গাজিপুর » মেয়র মান্নান রিমান্ড শেষে ফের কারাগারে
মেয়র মান্নান রিমান্ড শেষে ফের কারাগারে
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মান্নানকে নাশকতার মামলায় দুইদিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷
৫ জুন রবিবার দুপুরে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নিদেশ দেন৷
গাজীপুরের কোর্ট পরিদর্শক মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার নাশকতার একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অধ্যাপক মান্নানকে শনিবার দুপুরে দু’দিনের রিমান্ডে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে কালিয়াকৈর থানায় নেয়া হয়৷ কালিয়াকৈরে পুলিশবহনকারী গাড়িতে পেট্রোল বোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রবিবার দুপুরে তাকে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট (ডিজিটাল আদালত) তাহমিনা খানম শিল্পীর আদালতে হাজির করা হয়৷ শুনানী শেষে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরনের নির্দেশ দেন৷
কালিয়াকৈর থানার ওসি আব্দুল মোতালেব জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আনসার একাডেমির পাশে সাইদুরের বাড়ির সামনে গত ১৫ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যায় মেয়র মান্নানের নির্দেশে তার কর্মীরা পুলিশ বহনকারী একটি গাড়িতে পেট্রোল বোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করে পালিয়ে যায়৷ ওই ঘটনায় অধ্যাপক এমএ মান্নানসহ ২৭জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৩০/৩৫জনকে আসামি করে এসআই মনিরুল ইসলাম বাদি হয়ে কালিয়াকৈর থানায় নাশকতার একটি মামলা করেন৷ দায়ের করা ওই মামলায় অধ্যাপক এম এ মান্নানের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে গত ৪ মে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-২ এ হাজির করা হয়৷ শুনানী শেষে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ওই আদালতের বিচারক শহীদুল ইসলাম৷
উল্লেখ্য, নাশকতার ঘটনায় জড়িত থাকায় অধ্যাপক এমএ মান্নানকে গত ১৫ এপ্রিল শুক্রবার রাতে কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ ওই রাতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাসত্মায়, কালিয়াকৈরের আনসার একাডেমির সামনে এবং টঙ্গীর টিএন্ডটি আলিফ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ পৃথক নাশকতার ঘটনা ঘটে৷ এ তিনটি ঘটনায় অধ্যাপক এমএ মান্নানকে প্রধান আসামী করে জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর ও টঙ্গী থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়৷ এরমধ্যে টঙ্গী থানার নাশকতার মামলায় [১৫(৪)১৬] একদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গত ১ জুন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়৷
এর আগে গত ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাতে যাত্রীবাহীবাসে পেট্রোলবোমা হামলার মামলায় ওই বছরের ১১ ফেব্রম্নয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএস’র নিজ বাসা থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভের পর গত ২ মার্চ জামিনে কারামুক্ত হন৷ জয়দেবপুর থানার একটি ফৌজদারি মামলায় মান্নানের বিরম্নদ্ধে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র ২০১৫ সালের ১২ মে গাজীপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে গৃহীত হওয়ায় ওই বছরের ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ তাকে মেয়র পদ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে৷ অধ্যাপক এমএ মান্নান গত ৩১ মার্চ মেয়র পদ থেকে তাকে সাময়িক বহিস্কারাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন৷ মেয়র মান্নানকে দেওয়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ওই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ গত ১১ এপ্রিল ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে হাইকোর্ট৷ পরে ১৩ এপ্রিল সুপ্রীম কোর্টের আপিল করলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রাখেন৷
এরপর গত ১৯ এপ্রিল ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১২ এর উপধারা (১) এর ক্ষমতা বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে আবারও সাময়িক বরখাসত্ম করে৷
অধ্যাপক এমএ মান্নানের অবর্তমানে ২০১৫ সালের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ মেয়র মান্নানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট ২৫টি মামলা রয়েছে৷