মঙ্গলবার ● ৭ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঝিনাইদহে মন্দিরের পুরোহিতকে জবাই : আইএসআই’র দায় স্বীকার
ঝিনাইদহে মন্দিরের পুরোহিতকে জবাই : আইএসআই’র দায় স্বীকার
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৫৫মিঃ) ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সোনাইখালী গ্রামের মহিষের ভাগাড় নামক স্থানে মঙ্গলবার সকালে আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী নন্দ (৭০) নামে এক পুরোহিতকে জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা ৷ নলডাঙ্গা সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের পুরোহিত আনন্দ গোপাল একই উপজেলার করাতিপাড়া গ্রামের মৃত সত্য গোপাল গাঙ্গুলীর ছেলে ৷
এই নিয়ে গত ১৯ ঘন্টায় হরিণাকুন্ডর এক ক্লিনিক মালিকসহ তিন জনকে হত্যা করা হলো ৷ সোমবার হরিণাকুন্ডুর দারিয়াপুর গ্রামে প্রকাশ্যে আলফাজ উদ্দীন (৬৫) ও হরিণাকুন্ডুর ক্লিনিক মালিক নজরুলকে আলমডাঙ্গার তিওরবিলা মাঠে গুলি ও জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা ৷ এদিকে হিন্দু পুরোহিত হত্যার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন আইএস ৷
মঙ্গলবার বিকাল ৩টার পর হুমকী পর্যবেক্ষনকারী সাইটে দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেওয়া হয় ৷ অন্যদিকে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসা খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনার সাথে নিঃসন্দেহে জঙ্গি সংগঠন জড়িত৷ নিহতর ছেলে দিনবন্ধু গাঙ্গুলী জানান, তার বাবা মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে বাড়ি থেকে নলডাঙ্গা সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের উদ্দেশ্যে বের হন ৷ পথের মধ্যে মহিষাডাঙ্গা বিলের মধ্যে পৌছালে রাস্তার উপর কে বা কারা জবাই করে হত্যা করে ৷ তারা বাবার কোন শত্রু ছিল না বলে ছেলে দিনবন্ধু জানান ৷ নিহত আনন্দ গোপালের ভাজিতা অরুন গাঙ্গুলী জানান, তার কাকা এলাকায় ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিল ৷ এক মটরসাইকেলে তিনজন এসে আকস্মিক ভাবে তার কাকা বাবুকে হত্যা করেছে বলে তিনি শুনেছেন ৷ স্থানীয় ইউপি মেম্বর আব্দুর রশিদ জানান, আনন্দ গোপাল তার প্রতিবেশি ছিলেন ৷ প্রতিদিন তিনি বাইসাইকেলে চড়ে নলডাঙ্গা মন্দিরে পুজা করতে যেতেন ৷ এ রকম একজন ভাল মানুষকে হত্যা করা অন্যায় বলে আব্দুর রশিদ মনে করেন ৷
সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবীর হোসেন জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হেলমেট পড়া দুর্বৃত্তরা আনন্দ গোপাল নন্দকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে ৷ তিনি জানান খবর পেয়ে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজিসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন ৷
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকাল ৯.৩০ টার দিকে পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী নন্দ মন্দিরে যাচ্ছিলেন ৷ তিনি নিজ বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার মহিষের ভাগাড় বিলের মধ্যে পৌছালে তিনজন হেলমেট পরিহিত মোটরসাইকেল আরোহী তার গতি রোধ করে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ৷ আঘাতের পর তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে পালিয়ে যায় ৷ লাশের সুরোতহাল প্রস্তুুতকারী এসআই মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, পরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী নন্দের হাত, মাথা, ঘাড়, গলাসহ বিভিন্ন স্থানে ধারোল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে ৷
এদিকে পুরোহিত হত্যার খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার, পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান ও ঝিনাইদহ র্যাসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে যান ৷
মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ৷ তিনি এ সময় সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনার সাথে নিঃসন্দেহে জঙ্গি সংগঠন জড়িত ৷ তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করায় সারা দেশেই এ ভাবে অস্থিতিশীল করে তোলা হচ্ছে ৷
তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্থ করতে চায় ৷ তারাই এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত৷ তিনি বলেন এর আগে খ্রিষ্টান চিকিত্সক সমির খাজা ও শিয়া ধর্মালম্বি হোমিও চিকিত্সক কালীগঞ্জের আব্দুর রাজ্জাক হত্যার সাথে এ ঘটনার মিল রয়েছে ৷
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, পুরোহিতকে কে বা করা হত্যা করেছে তাত্ক্ষনিক ভাবে বলা যাচ্ছে না ৷ তবে এ ঘটনার পর গোটা জেলার বিভিন্ন স্থানে তল্লাসী চৌকি বসিয়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের অভিযান শুরু হয়েছে ৷ তিনি আশা করেন খুব দ্রুতই হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে ৷