রবিবার ● ১৯ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » বালাগঞ্জে একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের সমন্বয়কারী ও ফিল্ড সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
বালাগঞ্জে একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের সমন্বয়কারী ও ফিল্ড সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
বালাগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি:: (৫ আষাঢ় ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৪৪মিঃ) ‘একটি বাড়ী একটি খামার’ (এবাএখা) প্রকল্পের বালাগঞ্জ উপজেলা সমন্বয়কারী (ইউসিও) তানজিল মাহমুদ চৌধুরী এবং ফিল্ড সুপারভাইজার হাসান আহমদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে ৷ প্রকল্পের বালাগঞ্জ অফিসের সাবেক (সদ্য অন্যত্র বদলী হওয়া) কম্পিউটার অপারেটর-কাম হিসাব সহকারী মো: আব্দুল কাইয়ুম ১০মে উপজেলা সমন্বয়কারী ও ফিল্ড সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির ১৬টি কারন উল্লেখ করে ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে একখানা লিখিত অভিযোগ প্রেরন করেন ৷ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ন সচিব) আকবর হোসেন স্বাৰরিত ১৫ জুন অফিস স্মারকমূলে একটি চিঠি ইস্যু করলে ১৬ জুন প্রকল্পের নিজস্ব ওয়েব সাইটে তা প্রকাশিত হয় ৷ ওয়েব সাইটে প্রকাশিত চিঠিতে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে৷ এদিকে অভিযুক্ত উপজেলা সমন্বয়কারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম আজহারুল ইসলামকে আর্থিক বিনিময়ের মাধ্যমে ম্যানেজ করেছেন বলেও জানা গেছে৷ ফলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চিঠি পাওয়ার বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করলেও অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত কিংবা প্রতিবেদন দেয়া থেকে তিনি বিরত রয়েছেন বলে অভিযোগ উটেছে ৷ উল্লেখ্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে অভিযুক্ত উপজেলা সমন্বয়কারী নিজেকে নির্দোষ প্রমান করার জন্য তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন তিনি নিজেই প্রস্তুত করছেন বলে বিশ্বস্থ সুত্র গুলো নিশ্চিত করেছে৷ লিখিত অভিযোগ বিবরণে জানা গেছে, উপজেলা সমন্বয়কারীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অভিযোগ গুলো হচ্ছে, ঊর্ধতন কতৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া রিন বিতরন ও সঞ্চয় উত্তোলন, ক্যাশ রেজিষ্টারে স্বাক্ষর না করা, সদস্যদের টাকা অনাদায়ী থাকাবস্থায় তাদের নামে টাকা পোস্টিং দেখানো, সদস্যদের মধ্যে ৩ দিনের বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষন ১ দিন করিয়ে প্রশিক্ষনের টাকা আত্মসাত্, সমিতির টাকা গ্রহন করার পর রশিদ বইয়ে তা বাকী দেখানো ও সমিতির প্রকৃত হিসাবের সাথে অনলাইন হিসাবের বিস্তর গরমিল রাখা হয়েছে ৷ তাছাড়া নিয়মিত ফিল্ডে যাওয়ার নির্দেশ থাকলেও উপজেলা সমন্বয়কারী ও ফিল্ড সুপারভাইজার হাসান ফিল্ডে পরিদর্শনে না গিয়ে অফিসে বসে পরিদর্শন খাতায় স্বাক্ষর করেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাঠ সহকারীরা অভিযোগ করেছেন ৷ এমনকী শ্রেষ্ট মাঠ সহকারী, শ্রেষ্ট সভাপতি ও ম্যানেজার মনোনীত করতে উপজেলা সমন্বয়কারী ও ফিল্ড সুপারভাইজার হাসান অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করেছেন বলেও অভিযোগে প্রকাশ ৷ অপর দিকে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন প্রসূত ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পটি এখন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে রূপান্তরীত হতে চলেছে ৷ কিন্তু প্রকল্পের বালাগঞ্জ উপজেলা সমন্বয়কারী ও ফিল্ড সুপারভাইজার হাসানের অনিয়ম-দুর্নীতির কারনে তা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ কয়েক মাস পুর্বে প্রকল্পের অভ্যনত্মরীন নিরীক্ষনের সময় বালাগঞ্জ অফিসে প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার ঘাটতি দেখা দেয়৷ ব্যাংক এশিয়ার প্রদত্ত ১ থেকে ৪০নং রশিদ বই নিরীক্ষন করে দেখা গেছে-উপজেলা সমন্বয়কারী, ফিল্ড সুপারভাইজার হাসান ও বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা একজন মাঠ সহকারী ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ক্যাশ গ্রহন করেছেন ৷ কিন্তু তাদের হাতে গ্রহন করা এই টাকার কোন হাদিস আজও মিলেনি ৷ পরতর্তীতে উপজেলা সমন্বয়কারী হিসেবের গরমিল থাকা টাকাগুলো ভাগ-ভাটোয়ারা করে নেয়ার জন্য সাবেক কম্পিউটার অপারেটারকে প্রস্তাব দিলেও কম্পিউটার অপারেটার আব্দুল কাইয়ুম তাতে সাড়া দেননী ৷ এতে উপজেলা সমন্বয়কারী ক্ষিপ্ত হয়ে ফিল্ড সুপার ভাইজার হাসানকে দিয়ে কম্পিউটার অপারেটরকে শাস্তিমুলক বদলীর ভয় দেখিয়েছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ৷ হিসেবে বেমিল থাকা টাকার কিছু অংশ পরবর্তীতে মত্স প্রশিক্ষনের টাকা থেকে এনে পুরন করা হয় বলে জানা গেছে ৷ ৩ দিনের মত্স প্রশিক্ষনের কথা থাকলেও ১দিনের মধ্যে প্রশিৰন শেষ করা হয় বলে প্রশিক্ষনার্থীদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে ৷ প্রশিক্ষন শেষে কম্পিউটার অপারেটরকে ভূয়া বিল-ভাউচার তৈরী করার নির্দেশ দেয়া হয়৷ কিন্তু তাতে অপারগতা প্রকাশ করলে উপজেলা সমন্বয়কারী ও ফিল্ড সুপার ভাইজার হাসান কম্পিউটার অপারেটরকে নানা ভাবে হুমকী-ধামকী দেন৷ পরবর্তীতে উপজেলা সমন্বয়কারী কম্পিউটার অপারেটরকে কুতুবদিয়া উপজেলায় শাস্তিমুলক বদলী করিয়েছেন বলে কম্পিউটার অপারেটর আব্দুল কাইয়ুম অভিযোগ করেছেন৷ তাছাড়া ছাত্র শিবিরের সাবেক ক্যাডার ও পিতা-মাতার ত্যাজ্য সন্তান ফিল্ড সুপারভাইজার হাসান আহমদ খুবই চতুর প্রকৃতির লোক ৷ তার পরামর্শেই পরিচালিত হন উপজেলা সমন্বয়কারী ৷ সাবেক উপজেলা সমন্বয়কারীকেও তিনি হাত করে নিয়েছিলেন ৷ যার ফলে সাবেক উপজেলা সমন্বয়কারী বালাগঞ্জ থেকে বদলী হয়ে যাওয়ার সময় ফিল্ড সুপারভাইজার হাসান আহমদকে উপজেলা সমন্বয়কারীর দায়িত্ব প্রদান করে যান ৷ এই সুবাদে হাসান তত্কালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা ভুমি কর্মকর্তাকে সে আয়ত্বে রেখে বেপরুয়া ভাবে লাগামহীন অনিয়ম দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকেন ৷ হাসান উপজেলা সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বোয়ালজুড় ইউনিয়নের একটি সমিতিতে কয়েক লক্ষ টাকা রিন দেন, কিন্তু হলেও এখনো তা আদায় হয়নী ৷ বর্তমান উপজেলা সমন্বয়কারী যোগদান করার পর হাসান তাকেও ম্যানেজ করে নিয়ে এসিআর ও শকোজ লেটার প্রস্তুতের কতৃত্ব নিয়ে নেন ৷ অফিসে দায়িত্বরত মহিলা মাঠ সহকারীরা সহ সমিতির মহিলা ম্যানেজার ও মহিলা সদস্যরা অফিসে আসলে ফিল্ড সুপারভাইজার হাসান তাদেরকে প্রায়ই কু-প্রস্তাব দেন বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে ৷ এসিআর ও শোকজের ভয়ে মাঠ সহকারীর হাসানের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন বলে নাম প্রকাশ না শর্তে মাঠ সহকারীরা জানিয়েছেন ৷ বেশ কয়েকটি সমিতির সভাপতি ম্যানেজার ও একাধিক সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন-মাঠ সহকারীরা দিন-রাত পরিশ্রম করেন কিন্তু রিন আনার জন্য অফিসে গেলে উপজেলা সমন্বয়কারী ও ফিল্ড সুপারভাইজার হাসান আহমদ আমাদেরকে অযথা হয়রানী করেন৷ তবে-উপজেলা সমন্বয়কারী তানজিল মাহমুদ চৌধুরী ও ফিল্ড সুপারভাইজার হাসান আহমদ উল্লেখিত অভিযোগ গুলো অস্বীকার বলেন-এটি আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত অফিস, আর স্বচ্ছ ভাবে অফিস চালাতে গেলে সমালোচনা হতেই পারে ৷ উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, এখানে আমি আসার বেশী দিন হয়নী, তাই বিগত দিনের অনেক বিষয়ই আমার অজানা ৷