রবিবার ● ২৬ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন ডা. গেলাম ফারুক ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ
লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন ডা. গেলাম ফারুক ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: সরকারী নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে গত ২২ জুন বুধবার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে গোপনীয়ভাবে অবৈধভাবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গ্রাম ডাক্তার প্রশিক্ষন কর্মশালার উদ্বোধন করেন জেলার সিভিল সার্জন (সিএস) গোলাম ফারুক ভূঁইয়া। অথচ গত ১১ মে ২০১৬ তারিখে বাংলাদেশ গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয় কর্তৃক লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার কথিত সভাপতি বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে সমিতির নীতিমালা ভঙ্গ, গ্রাম ডাক্তারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজী ও সাম্প্রদায়ীক উস্কানীর অভিযোগে জেলার সকল প্রকার সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। যাহার অনুলিপি জেলার সিএস কার্যালয়ে ১৮ মে ২০১৬ তারিখে নথিভূক্ত করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতি লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার বহিস্কৃত সভাপতি বোরহান উদ্দিন গ্রাম ডাক্তারদের সরকারী সনদ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন গ্রাম ডাক্তার জানান, বহিস্কৃত ও কথিত সভাপতি বোরহান উদ্দিন সিএস কার্যালয়ে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে এই প্রশিক্ষন কর্মশালার অনুমোতি নেন। বোরহান জানান, তিনি এই প্রশিক্ষণের জন্য সিএস কার্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় মোটা অংকের টাকা খরচ করেছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন গ্রাম ডাক্তার জানান, এই প্রশিক্ষনের বিনিময়ে গ্রাম ডাক্তারদের কাছ থেকে মাথা পিছু ৮ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা করে গ্রহন করছে বোরহান উদ্দিন।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানায়, অবৈধ প্রশিক্ষণ কর্মশালা উদ্বোধনকালে জেলার দায়িত্বশীল গ্রাম ডাক্তার নেতৃবৃন্দের তোপের মুখে জেলার সিভিল সার্জন গোলাম ফারুক ভূঁইয়া পুলিশ প্রটেশনে অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এর লক্ষ্মীপুর জেলা সভাপতি ডা. আশফাকুর রহমান মামুন এর কাছে গ্রাম ডাক্তার প্রশিক্ষণ কর্মশালার বৈধতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, গ্রাম ডাক্তার প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন হয়েছে কিনা আমার জানা নেই, তবে এব্যাপারে সরকারী কোন নির্দেশনা নেই।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর লক্ষ্মীপুর জেলা সভাপতি ডা. জাকির হোসেন জানান, এটি সর্ম্পূন অবৈধ এবং এন্টি গভার্মেন্ট এক্টিভিটিস। (স্বাচিপ) এর লক্ষ্মীপুর জেলা সদস্য সচিব ডা. রত্ন দীপ পাল জানান, বর্তমান সিভিল সার্জন লক্ষ্মীপুর জেলার স্বাস্থ্য সেবাকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে তিনি বাধা গ্রস্থ করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক আলমগীর মজুমদার জানান, আমার কাছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গ্রাম ডাক্তার প্রশিক্ষনের ব্যাপারে কোন অনুমোতিপত্র আসে নাই। তিনি (সিএস) কি করে এসব করে তা আমার জানা নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাইমারি হেলথ কেয়ার এর পরিচালক হাবিব আব্দুল্যাহ সোহেল জানান, এই প্রশিক্ষনের বিষয়ে আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোন নির্দেশনা পাই নাই এবং কাউকে প্রশিক্ষণের অনুমোতি দেওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা। এই ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা.গেলাম ফারুক ভুঁইয়ার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই প্রশিক্ষণটি আমি ভূল বসত উদ্বোধন করে ফেলেছি, পরবর্তীতে জানতে পারি এই প্রশিক্ষনের ব্যাপারে এখনো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোন অনুমোতিপত্র প্রদান করে নাই। আমি প্রশিক্ষন কার্যক্রমটি বন্ধ করে দিয়েছি।
আমাদের প্রতিনিধি অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। সিভিল সার্জন গোলাম ফারুক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিস্তর অনিয়ম, দূর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমের সাথে জাড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে আমাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে আসে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রাম ডাক্তারদের প্রশিক্ষনের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন সাব সেন্টার থেকে প্রায় শতভাগের অর্ধেক ডাক্তাদের ডেপোটেশন বাণিজ্যের মাধ্যমে সদর হাসপালে পদায়ন, হাসপাতালের উচ্চ মাত্রার এন্টিবায়োটিক গরীব রোগীদের না দেওয়া ও আরএমও দের কাছ থেকে মাসিক মাসোয়ারা নেওয়াসহ আরো বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে।