সোমবার ● ২৭ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঝিনাইদহের কে এই রেজাউল পাঠান
ঝিনাইদহের কে এই রেজাউল পাঠান
ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি :: (১৩ আষাঢ় ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৪৯মিঃ) ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর আদর্শ পাড়ার মৃত মমিন পাঠানের ছেলে রেজাউল পাঠান ছিলো ভবঘুরে৷ অভাব অনাটনের সংসার ছিল তাদের৷ এ কারণে তার মাকে চলে যেতে হয় দেশের বাইরে টাকা রোজগারের জন্য৷ সেখান থেকে মা যে টাকা পাঠাতো তাই দিয়ে কষ্টের মধ্যে চলতো সে৷ মাঝে মধ্যেই দেখা যেত গ্রামঞ্চলে কোটচাঁদপুর থানার কোন দারোগা মামলার তদন্তে গেলে রেজাউল পাঠান তার সাথে যেত ৷ বিনিময়ে কিছু পয়সা পেত৷
এই ভাবে হঠাত্ করে সে শুরু করে পুলিশের সোর্সের কাজ৷ ভারতীয় মাদক, চিনি, লবন, শাড়ী কাপড় থেকে শুরু করে আসামী ধরিয়ে দেয়ার কাজে নেমে পড়ে৷ বছর দুয়েকের মধ্যে সে এ এলাকার পুলিশের আস্তাভাজন সোর্স হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে৷
এলাকায় রেজাউল পাঠান থেকে পরিচিতি পায় রেজাউল দালাল হিসাবে৷ প্রসাশনের আস্থা ভাজন হওয়ার সুযোগে সুচতুর রেজাউল দালাল, সোর্সের কাজের পাশাপাশি নিজেই মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট গড়ে তোলে৷ পাশাপাশি পুলিশের অন্য সোর্সদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানিসহ নিজে মাদক রেখে তার আস্তাভাজন দারোগাকে খবর দিয়ে ধরিয়ে দিত৷
ফলে রেজাউল দালালের ভয়ে পুলিশের সাথে সোর্সেও কাজ করতে অন্য কেউ সাহস পেত না৷ পরে ওই সোর্সরা জামিনে মুক্তি পেলে বা রেজাউল দালাল জামিন করে এনে নিজেই তাদের কাজে লাগাতো৷ ফলে এ এলাকায় পুলিশ. র্যাব , ডিবি অন্য কোন সোর্সের দ্বারা কাজ করাতে না পেরে সোর্সের কাজের জন্য অনেকটা রেজাউল দালালের উপর নির্ভর হয়ে পড়ে৷
যে কারণে বিভিন্ন সময় রেজাউল দালালকে সাথে নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের কিছু দারোগা অভিযান পরিচালনা করায় সে হয়ে ওঠে বেপরোয়া৷ প্রায় সময় সে রাতের বেলায় অপরিচিত লোককে পুলিশের পোষাক পরিয়ে নিজে সাথে থেকে কোটচাঁদপুর-জীবননগর মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে নির্জন স্থানে গাড়ী থামিয়ে তল্লাসী করতো৷
বিষয়টি প্রচার হয়ে পড়ায় বেশ কয়েকবার র্যাব পুলিশ তাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালায়৷ পরবর্তীতে সে গ্রেফতার এড়িয়ে প্রসাশনের নিকট কিছু ভারতীয় মাদক ধরিয়ে দিয়ে আবারো সখ্যতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়৷
২০১৫ সালে রেজাউল দালাল বেশ কয়েকটি স্বর্ণের চালান ধরিয়ে দিয়ে রাতারাতি কোটি পতি বনে যায়৷ একাধিক সূত্র জানায়, স্বর্ণে চালান বার ধরা পড়ার কারণে ওই সকল চোরাচালানিরা রেজাউল দালালের সাথে হাত মিলিয়ে স্বর্ণের চোরাচালানী ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছিল৷
যে কারণে বর্তমানে স্বর্ণ চোরাচালান ব্যাপক হারে চললেও এখন আর ধরা পড়ে না৷ এই স্বল্প সময়ের মধ্যে রেজাউল দালাল বানিয়েছে দু’তলা বিশিষ্ট বাড়ী, তাতে এসি লাগানোসহ বসানো হয় ৪টি সিসি টিভি ক্যামেরা৷ এছাড়া এলাকাসহ তার শ্বশুর বাড়ীতে ১০ থেকে ১২ বিঘা কিনেছে সে৷ এ ছাড়া তার নামে বেনামে অনেক টাকা ও সম্পদ রয়েছে বলে এলাকাবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়৷ টাকার দাপটে নিজ এলাকা ও বাইরের সন্ত্রাসীদের নিয়ে গত পৌর নির্বাচনে কোটচাঁদপুর ২ নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচন করে জয়ী হয়৷
কথিত আছে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ও প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয় সে৷ কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর সামাজিক বিচারের নামে বাড়ীতে আটকে রেখে অনেকে কাছ থেকে অর্থ হাতানোসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যাকলাপ অব্যহত রেখেছিলো এই রেজাউল দালাল৷
শেষ পর্যন্ত র্যাবের সফল অভিযানে রেজাউল দালাল আটক হয়ে শ্রীঘরে পাঠায়৷ তবে এলাকার মানুষ বলাবলি করছে রেজাউল পাঠান টাকার জোরে মুক্ত হয়ে আবারো তার সাম্রা্রজ্য ফিরে পাবে এবং পুরানো অপকর্ম চালিয়ে যাবে৷