শনিবার ● ২ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » মোবারকগঞ্জ চিনিকলে ৪৫ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত
মোবারকগঞ্জ চিনিকলে ৪৫ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত
ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি :: (১৮ আষাঢ় ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় দুপুর ২.৩০মিঃ) ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অবস্থিত দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ভারি শিল্পি প্রতিষ্ঠান মোবারকগঞ্জ চিনিকলের উত্পাদিত চিনি মিলগেটে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ ও ৫২ টাকা কেজি৷ ব্যবসায়ীরা এ চিনি মিলগেট পার করেই ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছে ৬২ টাকা৷ এক কেজি চিনি মিলের কাছ থেকে ক্রয় করে ১৪ টাকা বেশি মুনাফায় বিক্রি করছে৷
তবে সাধারন ভোক্তা আর মিল কর্তৃপক্ষ বলছে রমজান ও ঈদে চিনির ব্যপক চাহিদা থাকার কারণে এই সুযোগ গ্রহন করছে কিছু অসাধু ডিলার ও ব্যবসায়ীরা৷ এদিকে ন্যায্য মূল্যে মিল এলাকার সাধারন ভোক্তাদের হাতে চিনি পৌছে দিতে মিল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব পরিবহনে করে ৪৮ টাকা খোলা ও ৫২ টাকা কেজি দরে প্যাকিং করা চিনি খোলাবাজারে চিনি বিক্রি করছে৷
এদিকে গত কয়েক বছরে মিলটি অর্থ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না৷ ফলে মুসলিম সমপ্রদায়ের সবথেকে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল ফিতর এগিয়ে আসলেও জুন মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি প্রায় ৬শ শ্রমিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর৷ তবে ক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের ঠেকাতে আপাতত বোনাসের টাকা পরিশোধ করছে মিলটি৷এদিকে ঈদের আগেই জুন মাসের বেতন না পেয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা৷ তারা জুন মাসের বেতন ও সরকার ঘোষিত নতুন পে-স্কেল বাসত্মবায়নের দাবিতে আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছে৷
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪-২০১৫ আখ মাড়াই মৌসুমে চিনি উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৯২১ মেট্রিক টন থাকলেও উত্পাদন হয় ৪ হাজার দুইশত ৩৫ মেট্রিক টন৷ সর্বশেষ ২০১৫-২০১৬ মাড়াই মৌসুমে চিনি উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরে ৪ হাজার ১২০ মেট্রিক টন তবে উত্পাদন করে করে ৪ হাজার একশত ২৫ মেট্রিক টন৷ গত দুই মাড়াই মৌসুমে উত্পাদিত ৮ হাজার ৩শ ৫৯ মেট্রিক টন চিনির প্রায় সবই অবিক্রিত রয়েছে৷ যার মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা৷
এদিকে গত কয়েক মাসে ২০১৩-২০১৪ মাড়াই মৌসুমে উত্পাদিত চিনি ও সবেমাত্র শেষ হওয়া আখ মাড়ায়ের চিনি বিক্রি করেছে৷ তবে সে টাকার সিংহভাই হেড অফিসের দেনা পরিশোর করতে ব্যয় হয়েছে৷ ফলে শ্রমিকদের জুন মাসের বেতন দিতে পারছে না মিলটি৷ মোবারকগঞ্জ চিনিকলে ৪৫ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত, মিল পেরিয়ে ৪৮ টাকার চিনি ৬২ টাকা
মোবারকগঞ্জ চিনিকল এলাকা কালীগ্েঞ্জর বিশিষ্ট চিনি ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের জানান, মিলের তালিকাভুক্ত ডিলার আছে প্রায় ৮০০ জন৷ স্থানীয় ঝিনাইদহ জেলায় আছে মাত্র ২২ জনের মতো৷ মিল গেটে চিনির কেজি ৪৮ টাকা হলে একজন ডিলার চিনি পায় মাত্র এক টন৷
জেলার ২২ ডিলারের এই চিনি দিয়ে ভোক্তাদের চাহিদা মেটানো একেবারে অসম্ভব৷ যে কারনে বাইরের ডিলারদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি ডিও কিনে চিনি উত্তোলন করতে হয়৷ ফলে ৪৮ টাকা এক কেজি চিনির মূল্য হলেও আমরা বেশি দামেই চিনি উত্তোলন করি৷ তবে তালিকাভুক্ত ডিলাররা ৪৮ টাকা কেজি দরেই মিলগেট থেকে চিনি উত্তোলন করে বলে এই ব্যবসায়ী জানান৷
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বলরামপুর গ্রামের ভোক্তা ওহিদুল ইসলাম জাানান, শুনেছি সুগারমিলে চিনি ৪৮ টাকা কেজি দরে পাওয়া যায়৷ কিন্তু আমি কয়েকবার চেষ্টা করে পায়নি৷ ফলে বাধ্য হয়ে বাজার থেকে ৬২ টাকা দরে কেজির চিনি কিনেছি
মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন জানান, আমরা হেড অফিসের নির্দেশে স্থানীয় ডিলারদের কাছে নির্ধারিত মূল্যে চিনি বিক্রি করি৷ কিন্তু রমজান এবং ঈদে চিনির চাহিদা বেশি থাকায় ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মূল্যে ভোক্তাদের কাছে চিনি বিক্রি করছে৷
একারণে ন্যায্য মূল্যে মিল এলাকার সাধারন ভোক্তা যেন চিনি কিনতে পারে এজন্য মিলের শ্রমিকরা নিজস্ব পরিবহনে করে ৪৮ টাকা কেজি দরে খোলাবাজারে চিনি বিক্রি করছে৷
উলেস্নখ্য, ১৯৬৮ সালে আখ মাড়ায়ের মধ্যে দিয়ে প্রথম যাত্রা শুরু হওয়া এ মিলটি পুঞ্জিভূত দেনা রয়েছে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা৷
১৯৬৫ সালে হল্যান্ডের স্টর্ক ওয়ার্কস পুওর কোম্পানীর নির্মানকৃত মিলটির প্রতিদিন মাড়াই ক্ষমতা ১৫০০ মেট্রিক টন৷ ১৮৯.৪০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই মিলটি প্রথম পরীক্ষা মূলক মাড়াই মৌসুম শুরু হয় ১৯৬৭-৬৮ সালে৷