রবিবার ● ১৭ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » মেস ভাড়া দিতে হলে পুলিশের অনুমতি লাগবে : এসপি ঝিনাইদহ
মেস ভাড়া দিতে হলে পুলিশের অনুমতি লাগবে : এসপি ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহে এখন থেকে মেস ভাড়া দিতে হলে পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে৷ কারা মেসে থাকবে তাও ঠিক করে দেবে পুলিশ৷ এমন তথ্য জানিয়েছেন ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলতাফ হোসেন৷
পুলিশ সুপার আলতাফ দাবি করেন, তাঁর জেলায় জঙ্গিদের কোনো আস্তানা নেই৷ এমনকি জেলা শহরের সোনালীপাড়ার (খোন্দকার পাড়া) অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট কাওছার আলীর বাড়িতে নিহত জঙ্গি নিবরাস ইসলাম ও তার কথিত খালাতো ভাই আবির রহমান ছিল এমন কোনো তথ্যও নেই তাঁদের কাছে ৷ ঝিনাইদহের কাওছার আলীর মেস থেকে ঢাকার গুলশানে হামলা চালানোর বিষয়ে কথা বলেন এসপি ৷ তিনি বলেন, যেদিন ঢাকায় হামলার ঘটনা ঘটেছে সে দিনই ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালীচরনপুর ইউনিয়নের মধুপুর-কাষ্টসাগরা গ্রামের রাধা-মদন-গোপাল মঠের সেবায়েত শ্যামল নন্দ দাস খুন হন৷ একই দিনে নিবরাস ইসলাম দুই ঘটনায় অংশ নিয়েছে এমন খবর বিভ্রান্তিকর৷ পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, গুলশান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিরা এখানে অবস্থান করেছে এমন কোনো তথ্য প্রমাণ আজো আমরা পায়নি৷ তবে বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি৷
গণমাধ্যমে প্রচার করা খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার জন্য প্রমাণহীন তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে৷’ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলায় নিহত জঙ্গি আবির রহমান ঝিনাইদহে ছিল না এমন দাবি করে পুলিশ সুপার বলেন, ‘বিষয়টি সাজানো৷’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, ‘পাশেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়-যে কারণে ছাত্রশিবিরের আধিপত্য এখানে বেশি৷ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে ডাটাব্যাজ তৈরি করা হচ্ছে৷
এখন থেকে মেস ভাড়া দিতে হলে পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে৷ কারা মেসে থাকবে তাও ঠিক করে দেবে পুলিশ৷’ জেলা শহরের আলোচিত সোনালীপাড়ায় (খোন্দকারপাড়া) অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট কাওছার আলীসহ পাঁচজন এখন কোথায় আছেন এমন প্রশ্ন করা হলে আলতাফ হোসেন বলেন, বিষয়টি জানা নেই তাঁর৷ বাড়িটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের খবরও জানেন না বলেও দাবি করেন ঝিনাইদহ পুলিশের এই কর্মকর্তা৷
এসপি আলতাফ হোসেন বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এ জেলায় এক সময় চরমপন্থীদের অভয়ারণ্য ছিল৷ এখন নেই৷ ২০১৩-১৪ সালে জামায়াত-শিবির মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে৷ এখন পরিবেশ ভালো দাবি করে এসপি বলেন, চলতি বছরের এ পর্যন্ত জেলায় চারটি আলোচিত হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ সব ঘটনা আন্তরিকতার সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে৷
এসব হত্যার সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রশিবিরের নেতারা জড়িত৷ অন্য দিকে এ পর্যন্ত জেলার চারজন যুবক নিখোঁজ রয়েছে বলে সবশেষ জানিয়েছে পুলিশ৷ তারা জঙ্গিদের দলে যোগ দিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে৷ এদিকে পুলিশ সুপার ঝিনাইদহে দু’জন জঙ্গী থাকার খবর অস্বীকার করলেও যে বাড়িতে নিবরাস ও আবির রহমান ছদ্ম নামে ছিলেন তারা ছবি দেখে নিশ্চিত হয়ে সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন৷
এ ছাড়া সোনালীপাড়ার যুবক সমাজ যারা নিবরাস ইসলামের সাথে ফুটবল খেলেছেন তারও বিষয়টি স্বীকার করেন৷ তারা নিবরাসকে সাঈদ ও আবিরকে শাওন বলে জানতেন৷ মুলত তাদের বরাত দিয়ে মিডিয়ায় এ খবর প্রচারিত হয়৷
তাছাড়া সোনালীপাড়ার ভাড়া বাসার মালিকের স্ত্রী বিলকিস নাহার এ ঘটনার পর তার স্বামী ও দুই সন্তানসহ ৫ জনতে তুলে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে যওয়ার কথাও গনমাধ্যমকে জানান৷ আর গন মাধ্যমে ছাত্রাবাসে জঙ্গী থাকার খবর প্রকাশিত হওয়ায় ঝিনাইদহের প্রায় ২০০ ছাত্রবাসে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে ৷
হয়রানীর ভয়ে অনেক ছাত্র মেস ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে৷ বাড়ির কাছ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও ঝিনাইদহ শহরে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হওয়ায় শহরের ছাত্রাবাসে থেকে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী পড়ালেখা করছেন৷ এখন এ সব ছাত্রাবাসে নিয়মিত পুলিশ নজরদারী করছে ৷ রাতে ঝিনাইদহ শহরে ব্যাপক ভাবে পুলিশ টহল দিচ্ছে৷