বুধবার ● ৩ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » বিশ্বনাথে হিন্দু ধর্মালম্বীদের আখড়া’র ৬৮৩ শতক ভূমি দখলের অভিযোগ
বিশ্বনাথে হিন্দু ধর্মালম্বীদের আখড়া’র ৬৮৩ শতক ভূমি দখলের অভিযোগ
বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: (১৯ শ্রাবণ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১০.২২মিঃ) সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি পীর লিয়াকত হোসেনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে হিন্দু ধর্মালম্বীদের আখড়া প্রায় ৬৮৩ শতক ভূমি অবৈধ দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে ৷ চেয়ারম্যান থাকাকালে প্রভাব কাটিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে জাল (নকল) দলিল করে তিনি (লিয়াকত) উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামস্থ শত বছরের প্রাচীন ‘শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউ আখড়া’র প্রায় ৬৮৩ শতক ভূমি জোরপূর্বক ভাবে অবৈধ দখল করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের৷
জানা গেছে, উপজেলার মদনপুর মৌজার, জেএল নং ১৭, এস এ খতিয়ান ০৫ ও ১৩০৬, দাগ নং ৩২৯২ (১ শতক), ৩২৯৩ (২৪১ শতক), ৩২৮৬ (৭৮ শতক), ৩২৮৭ (৩৪ শতক), ৩২৮৮ (৪৬ শতক), ৩২৮৯ (২১ শতক), ৩২৯০ (২১ শতক), ৩২৯১ (২৭ শতক), ৩২৯৮ (২৭ শতক), ৩২৬৩ (৭১ শতক), ৩৩৩৯ (১০ শতক), ৩৫৫৩ (১০৬ শতক) অবস্থিত ‘শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউ আখড়া’র-এ ভূমির (৬৮৩ শতক) বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা৷
সম্প্রতি সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, ‘শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউ আখড়া’র ভূমিতে থাকা উপাসনালয়ের সমানেই টিন দিয়ে একটি ঘর নির্মাণ করেছেন অবৈধ দখলদার বলে অভিযুক্ত পীর লিয়াকত হোসেন৷ আর সে ঘরে বসবাস করেন জায়গা-জমি দেখাশুনা করার দায়িত্বে থাকা কুমারপাড়া থেকে আসা কালা মিয়ার স্ত্রী দুলভী বেগম৷ রাতের আধাঁর নেমে এলেই টিনের তৈরী ঘরে মাদকের রাজত্ব শুরম্ন হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও সেবনের জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে এলাকায় পরিচিত এস্থানে বিভিন্ন জায়গা থেকে মাদকসেবীরা আসেন বলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে৷ এদিকে পবিত্র একটি স্থানে অবৈধ ভাবে মাদকের জমজমাট ব্যবসা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সনত্মানদের সুন্দর ভবিষত্ নিয়ে আতংঙ্কের মধ্যে রয়েছেন এলাকাবাসী৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউ আখড়া’র সেবায়েত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিনয়ভূষণ গোস্বামী৷ তাঁর মৃতু্যর পরও দীর্ঘদিন স্থানীয় হিন্দু ধর্মালম্বীরা ওই আখড়া বাড়িতে নিজেদের পূর্জা অর্চনা করেন৷ কালের পরিবর্তে এদেশে সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের আখড়ার প্রায় ৬৮৩ শতক ভূমি জালিয়াতির মাধ্যমে জাল (নকল) দলিল তৈরী করে অবৈধ ভাবে দখল করে নেন পীর লিয়াকত হোসেন৷ এলাকার স্থানীয়দের কাছে ভূমিখোকো হিসেবে পরিচিত পীর লিয়াকত হোসেন অত্যনত্ম প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ার কারণে তার (লিয়াকত) বিরম্নদ্ধে এত দিন কেউ প্রতিবাদ বা অবস্থান নিতে পারেনি৷
স্থানীয়দের অভিযোগ, পীর লিয়াকত হোসেনের দখলে থাকা ভূমি উদ্ধারের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে ‘হিন্দু ধর্মালম্বীদের’ উপর ‘লিয়াকত গং’ কর্তৃক নানান ধরণের নির্যাতন নেমে ৷ তাই নির্যাতন ও নিজেদের প্রান ভয়ে এতদিন ধরে নিরব ভূমিকা পালন করে আসছেন স্থানীয় সংখ্যালঘুরা ৷ সম্প্রতি সময়ে সংখ্যালঘুদের কল্যাণে সরকারের প্রশংসনীয় বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারণে ‘শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউ আখড়া’র প্রায় ৬৮৩ শতক ভূমি উদ্ধারের জন্য নিজেদের মনের ভিতরে থাকা ভয়কে জয় করে আবারও তত্পর হয়ে উঠেছেন স্থানীয় হিন্দু ধর্মালম্বীরা৷
আখড়া বাড়ির জায়গা-জমি দেখাশুনা করার জন্য তাদেরকে পীর লিয়াকত হোসেন নিজে তার কর্তৃক আখড়ার ভূমিতে নির্মিত টিনের তৈরী ঘরে এনে রেখেছেন বলে সত্যতা স্বীকার করেছেন সেই ঘরে বসবাসকারী দুলভী বেগম৷
খাজাঞ্চী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শংকর চন্দ্র ধর বলেন, পীর লিয়াকত একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ার কারণে আখড়ার প্রায় ৬৮৩ শতক ভূমি দখল করার পরও তার (লিয়াকত) বিরুদ্ধে এত দিন কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করেন নি ৷ তবে বর্তমান সময়ে সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে সরকারের বিশেষ নজর থাকার কারণে এখন আখড়ার জায়গা উদ্ধারে প্রতিবাদী হয়ে উঠছেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্থানীয় জনতা৷
পীর লিয়াকত হোসেন জালিয়াতির মাধ্যমে জাল (নকল) দলিল তৈরী করে ‘শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউ আখড়া’র প্রায় ৬৮৩ শতক ভূমি অবৈধ ভাবে দখল করেছেন বলে অভিযোগ করেন এলাকার পরিমল দাশ ও সুধামনি নাথ’সহ এলাকাবাসীর অনেকেই৷
অবৈধ দখলের সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে পীর লিয়াকত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সব ভূমি আমি রেজিষ্ট্রারী করে ক্রয় করেছি ৷ আমার কাছে সব দলিল আছে৷
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আবদুল হক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই৷ তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে৷