সোমবার ● ১৫ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝিনাইদহের কৃষকের ছেলে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
ঝিনাইদহের কৃষকের ছেলে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (৩১ শ্রাবণ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.১২মিঃ) এবার মালয়েশিয়ার শীর্ষ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় “মালায়া ইউনিভার্সিটির” ফাইন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ঝিনাইদহের মো. মাহফুজুর রহমান৷ মালয়েশিয়ার এক নম্বরে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ায় ২৭তম এবং বিশ্বে অবস্থান ১৪৬৷ ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে মালয়েশিয়ার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতেও (এমএসইউ) কাজ করছেন মাহফুজুর৷ মালয়েশিয়াতেই উচ্চশিক্ষা নেওয়া মাহফুজুর পড়াশোনার প্রতিটি ক্ষেত্রেই রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর৷
২০০৬ সালে মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে (আইআইইউএম) বিবিএ বিভাগে ভর্তি হন মাহফুজুর রহমান৷ ২০১০ সালে স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন তিনি৷ ভালো ফলাফলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র ওভারঅল, সেরা ছাত্র একাডেমিক (ফেকাল্টি অব ইকোনোমিকস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস, আইআইইউএম) এবং সেরা ছাত্র বিবিএ বিভাগ সহ তিনটি পুরস্কার পান মাহফুজুর৷
এ ছাড়া পুরস্কার হিসেবে মালয়েশিয়ার শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট পান তিনি৷ বিবিএ পড়ার সময় সবগুলো সেমিস্টারে ডিন (ভালো রেজাল্টের জন্য) তালিকাভুক্ত ছিলেন তিনি৷ তিনি ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য এঙ্েিলন্স এ্যাওয়ার্ড (উপাচার্যের পুরস্কার) পান৷
ইন্টার স্টুডেন্টস রেসিডেন্ট কলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১০ এ আইআইইউএমের সেরা ৫ বক্তার একজন হন মাহফুজুর রহমান৷ তিনি ২০০৭-০৮ ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে বিবিএর ছাত্র থাকাকালে স্টুডেন্ট রেসিডেন্ট কলেজ ৫ (মাহাললা আলী)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন৷ এরপর ২০০৯-১০ সালে বিবিএ অ্যাসোসিয়েশনের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি৷
এ ছাড়া তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে ২০০৮-০৯ সালে স্টুডেন্ট সারকেল ১ ও ২ এবং কো-কারিকুলাম অ্যাকটিভিটির স্টুডেন্ট ফ্যাসিলেটর ছিলেন৷ তিনি ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যনত্ম স্টুডেন্ট লার্নিং অ্যান্ড ইনহ্যান্সিং ইউনিটে শিক্ষকতা ও স্টুডেন্ট ফ্যাসিলেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷
মাহফুজুর রহমান পড়ালেখার পাশাপাশি মোটিভেশনাল স্পিকার, রিসার্চ অ্যাসিসটেন্ট, টিচিং অ্যাসিসটেন্টসহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক কাজে জড়িত ছিলেন৷ ২০০৮ সালের ১০ মার্চ থেকে ১৭ মার্চ তিনি ইংলিশ ক্যাম্পে স্টুডেন্ট ফ্যাসিলেটর হিসেবে থাইল্যান্ড যান৷
বিবিএ শেষে মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে এনডাউমেন্ট ফান্ড (বৃত্তি) পান মাহফুজুর রহমান৷ বিবিএতে প্রথম বিভাগ থাকায় মাস্টার্স ছাড়াই মালায়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন্যান্সে পিএইচডি করার সুযোগ হয় তাঁর৷ ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মালায়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রাইট স্পার্ক স্কলারশিপ পেয়ে পিএইচডি শুরু করেন মাহফুজ৷ ২০১৫ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন৷
পিএইচডি করার সময় শিক্ষা গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১৪ সালে মালায়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সেন্টার (আইএসসি) একাডেমিক এঙ্েিলন্স এ্যাওয়ার্ড পান মাহফুজুর রহমান৷ বাংলাদেশ স্টুডেন্ট নাইট (বিএসএন) ২০১৫-এ তিনি ‘বিএসএন একাডেমিক এ্যাওয়ার্ড ফর দা ক্যাটাগরি অব ডকটোরাল’ স্টুডেন্ট পান৷ একই সঙ্গে তিনি ম্যাঙ্সি এবং হটলিংক ‘উইন টু মার্কেট’ আইডিয়া চ্যালেঞ্জ জেতেন৷
মাহফুজুর রহমানের অনেক নিবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে৷ তিনি জাতীয় ও আনত্মর্জাতিক সম্মেলনে তাঁর গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন৷ বর্তমানে তিনি বিয়েভিরিয়াল ফাইন্যান্স নিয়ে কাজ করছেন৷
মাহফুজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নেপা ইউনিয়নের বাগাডাঙ্গা গ্রামে৷ তাঁর বাবা মো. আজিজুর রহমান (মুকুল) পেশায় একজন কৃষক এবং মা. দাউলাতুন্নেছা বেগম একজন গৃহিণী৷ দুই ভাই (মাসুম) ও এক বোনের (সীমা) মধ্যে তিনি সবার ছোট৷
মাহফুজুর রহমান বলেন, একজন ব্যক্তি সঠিক মনোভাব, একাগ্রতা, সততা এবং এই বিশ্বাস নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করলে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট৷ পারিবারিক অবস্থা, বাবা-মায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা, জন্মস্থান যাই হোক না কেন তিনি সফল হবেনই৷
মাহফুজুর রহমান আরো বলেন, ‘আমার মতো একজন সাধারণ গ্রামের ছেলে যদি মালয়েশিয়ার প্রথম সারির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের প্রতিটি ছাত্র, ছাত্রী এর চেয়ে ভালো কিছু করতে পারে৷’