মঙ্গলবার ● ১৬ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার যাতায়াত সময় দুই ঘণ্টা
এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার যাতায়াত সময় দুই ঘণ্টা
অনলাইন ডেস্ক :: সকালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে অফিস করে আবার রাত ১০টায় বাসায় ঢুকলেন। অবাক লাগছে? অবাক হওয়ার কিছু নেই। এমনটা আপনি করতেই পারবেন ২০২৩ সালে।
কেননা ২০১৮ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার যাতায়াত সময় দুই ঘণ্টায় নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন সড়ক বিশেষজ্ঞরা। ২৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হতে যাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের মেয়াদ হবে চার বছর, কাজ শেষ হবে ২০২২ সালে।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা ও সমাজের বিশিষ্টজনদের নিয়ে ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস হাইওয়ের প্রস্তাবিত এলাইনমেন্ট এবং নকশা’ সম্পর্কিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা জানানো হয়। প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক শিশির কান্তি রাউৎ ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দল প্রধান গ্যাভিন স্ট্র্যাড।
কেন এক্সপ্রেসওয়ে :
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে বলা হয় বাংলাদেশের লাইফ লাইন। এই করিডোর দিয়েই আমদানি-রপ্তানিসহ দেশের সিংহভাগ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। দেশের অর্থনীতি এখনো চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক হওয়ায়, ৯৫ ভাগ আমদানি-রপ্তানি এ পথেই হয়ে থাকে। বর্তমান যে জাতীয় মহাসড়কটি রয়েছে তা নির্মাণ করা হয় ১৯৬৭ সালে। দুই লেনের ওই সড়কটি বর্তমানে চার লেনে উন্নিত করার প্রকল্পটি শেষ পর্যায়ে।
কিন্তু সড়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ৩ থেকে ৫ বছর পরে এ মহাসড়ক দিয়েও প্রয়োজন অনুপাতে পরিবহন চলাচল করতে পারবে না। এতে চট্টগ্রামের সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সঙ্কটে পড়বে।
তাই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতে সময় যেমন বাঁচবে তেমনি কমবে দুর্ঘটনা ও ঝুঁকি। প্রকল্প ব্যবস্থাপক শিশির কান্তি রাউতের মতে, ‘চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে সর্বোচ্চ সোয়া দুই ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগবে, তিন ঘণ্টা কোনোভাবেই নয়।’
এক্সপ্রেসওয়ের ফলে সুবিধা পাবে চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), মিরসরাই স্পেশাল ইকোনমিক জোন, মহেশখালীর গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী এলএনজি টার্মিনাল, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও আদমজী ইপিজেডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া ভুটান ও নেপালের সাথে সড়ক যোগাযোগ ও চট্টগ্রাম বন্দর বা গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার নিয়ে যে সম্ভাব্যতা রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে।
দেশের অধিকাংশ পর্যটন স্পটগুলো চট্টগ্রাম বিভাগে। তাই পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে উঠবে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রামসহ রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করবে এক্সপ্রেসওয়ের সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা।
কেমন হবে এক্সপ্রেসওয়ে :
পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দল প্রধান গ্যাভিন স্ট্র্যাড বলেন, ‘এটি একটি হাই ক্যাপাসিটি রোড। যে সড়ক ধরে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে একটি গাড়ি চলতে পারবে। তবে প্রবেশ ও নির্গমনে থাকবে নির্দিষ্ট সংখ্যক পয়েন্ট। যে কেউ যখন তথন চাইলেই এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে আসতে বা বেড়িয়ে যেতে পারবে না। সড়কের দুই পাশ থাকবে বেষ্টনী দিয়ে ঘেরা, থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ সড়কে যান্ত্রিক পরিবহন ছাড়া অন্য কোনো পরিবহনকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ের কারণে সড়কের দু’পাশে বসবাসরত জনসাধারণও কোনোভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে না। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক আন্ডারপাস ও ভেহিক্যাল আন্ডারপাসের ব্যবস্থা।’
প্রকল্প ব্যবস্থাপক শিশির কান্তি রাউৎ বলেন, ‘পুরো মহাসড়ক “ইন্টেজিল্যান্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের” মধ্যে থাকবে বলে নজরদারি করা যাবে। এতে দুর্ঘটনা ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে। এছাড়া পুরো এক্সপ্রেসওয়েজুড়ে সীমানা বেড়া থাকবে। ফলে সড়কটি অযান্ত্রিক যানবাহনমুক্ত থাকবে।’
স্বপ্নের ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে :
ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েত থাকবে মোট আটটি লেন। এর মধ্যে ছয়টি লেন দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের দ্রুতগামী যান চলাচল করবে। বাকি দু’টি লেন সার্ভিস লেন বা ইমারজেন্সি লেন হিসেবে ব্যবহার হবে। এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সহজে পণ্য ও যাত্রীরা কম সময়ে যাতায়াত করতে পারবে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত যেসব অর্থনৈতিক জোন আছে সেগুলোর সাথে এর যোগসূত্র রেখেই এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করা হবে।
এ লক্ষ্যে বিশ্বের উন্নত দেশকে মডেল ধরে তিনটি বিকল্প নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। আগামী দুই বছর চলবে বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়ন, বিনিয়োগকারী দেশ নির্বাচন ও জমি অধিগ্রহণের কাজ। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য জরিপ শেষ হয়েছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ২১৭ কিলোমিটার। মহাসড়কটি এলিভেটেডে ও অ্যাটগ্রেড পদ্ধতির সমন্বয়ে তৈরি হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ২১৭ কিলোমিটারের পুরো পথের পরিবর্তে বাজার এলাকা, জংশন ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে এলিভেটেডে বা দ্বিতল সড়ক হবে, যার দৈর্ঘ্য হবে মোট ১৯ দশমিক ৯ কিলোমিটার। মহাসড়কের ১৯৭ কিলোমিটার অংশে অ্যাটগ্রেড (ভুমির সমান্তরাল) পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।
এক্সপ্রেসওয়ে সাতটি পয়েন্টে গাড়িগুলো প্রবেশ ও নির্গমন করতে পারবে। পয়েন্টেগুলো হলো- ঢাকার মদনপুর, কমিল্লার দাউদকান্দি, ময়নামতি, পদুয়ার বাজার, ফেনী, চট্টগ্রামের বারৈয়ারহাট ও সলিমপুর।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দল প্রধান গ্যাভিন স্ট্র্যাড বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়েতে সাতটি ইন্টারচেঞ্জ অপশন, ৬৪টি আন্ডারপাস, তিনটি রেস্ট এরিয়া এবং ১০ লেইনের ডিজিটাল টোল প্লাজা থাকবে। রেস্ট এরিয়াতে থাকবে রেস্টুরেন্ট, শপিংসেন্টার ও রেস্টরুম।’
সভায় জানানো হয়, সম্ভাব্য পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মোট তিনটি এলাইনমেন্ট ও নকশা প্রস্তাব করা হয়। কারিগরি, পরিবেশ, সামাজিক, অর্থসংস্থান ও অর্থনৈতিক ক্যাটাগরি বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা অ্যাটগ্রেড (ভূমির সমান্তরাল) ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত নকশাটির এক নম্বর এলাইনমেন্টটির পক্ষে মত দেন।
প্রস্তাবিত দ্বিতীয় নকশায় অ্যাটগ্রেড ১৯৪ কিলোমিটার ও এলিভেটেড ১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের এবং তৃতীয় নকশায় ২২৬ দশমিক চার কিলোমিটার অ্যাটগ্রেড সড়ক ও ১৩ দশমিক ছয় কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প ব্যবস্থাপক শিশির কান্তি রাউৎ বলেন, ‘পুরো সড়কজুড়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হলে ব্যয় পড়বে ৬৭ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। অ্যাটগ্রেড ও এলিভেটেড দুই পদ্ধতির সমন্বয় হলে প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৬ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা লাগবে। তাই আর্থিক দিক বিবেচনায় প্রথম নকশাটি বাছাই করা হয়েছে।’